১, ১--, ১---, ১----- ইত্যাদির মান এক (১)। কিন্তু শূন্য (০) এদের মূল্য বাড়ি দিয়েছে শত থেকে কোটি গুণ। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো শূন্যের নিজের মান ও দাম ফাঁকা। শূন্য মানে কিছু নাই। শূন্য মানে মূল্যহীন বা গুরুত্বহীন। আবার ডানের শূন্যে মেলা মূল্য। মূল্য হবেই বা না কেন বয়স তো আর কম হলো। মিশরীয় সভ্যতা, মেসোপটেমীয় সভ্যতা ইত্যাদি পাড় হয়ে আজকের এই একবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত আসতে শূন্যের সুদীর্ঘ প্রায় ৩,৮০০ বছর লেগেছে। যে শূন্যের নিজের কোন মূল্য নেই, সেটি ছাড়া হয়ত আধুনিক সভ্যতারই কোন মূল্য থাকতো না! উপরের এক গুলোকে যদি এবার শূন্য দিয়ে ভরিয়ে দেই তাহলে টাকার হিসাবে সবাই তা পেতে চাইবে- ১০, ১০০, ১০০০, ১০০০০০। দুনিয়া জোরা সবাই এখন ডানের শূন্যের পিছনে ছুটছে। আজকে আমরা এই শূন্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
- শূন্য একটি ভয়াবহ সংখ্যা/ অংক। এটির আবিষ্কার নিয়েও রয়েছে তাই নানা জনের নানা মত। আবার কারা এটির ব্যবহার কোথায় প্রথম শুরু করেছে তা নিয়েও এখনো চলছে মত পার্থক্য। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের গণিতবিদ আর্যভট্টকেই শূন্যের জনক বা আবিষ্কারক বলা হয়। অন্যদিকে, বর্তমানে আমরা যে শূন্যের (আরবি সংখ্যা পদ্ধতি) ব্যবহার করি সেটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ব্রহ্মগুপ্ত। ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর লিখিত আরবদের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি নোট বা গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে জানা যায়। এরও ১২৩ বছর পর অর্থাৎ ৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে শূন্যের প্রচলন শুরু হয় বাগদাদ (বর্তমান ইরাক) এবং মধ্য প্রাচ্যে। সেখানকার গণিতবিদরা ভারতীয়দের সংখ্যা পদ্ধতিকেই ব্যবহার করতো। সে সময়কার গণিতবিদ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোয়ার্জিমি তাঁর বিভিন্ন গাণিতিক সমীকরণে শূন্য ব্যবহার করতো। তিনি শূন্যকে সিফর/সফর (আরবি) বলতো। এবং ৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁরা শূন্যকে ‘0’ এভাবে লিখতে শুরু করে। অন্যদিকে, ইউরোপে শূন্য ব্যবহারের প্রচলন শুরু হতে আরো কয়েক শতক (১২০২ খ্রি:) সময় লেগে যায়। তখনকার ইতালিয় গণিতবিদ ফিবোনাচি/ ফিবোনাচ্ছি ইতালির বণিকদের এবং জার্মানির ব্যাংকারদেরকে শূন্য ব্যবহারে প্রভাবিত করেন। অবশেষে, তাঁরা ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ব্যালেন্স খালি হয়ে গেলে বা অ্যাকাউন্টে কোন অর্থ না থাকলে কীভাবে তার সমাধান বা হিসাব রাখবে সেটি থেকে পরিত্রাণ পেতে শূন্য ব্যবহার করতে শুরু করে।
- শূন্য দেখতে অনেকটা ইংরেজি বর্ণ 'O' এর মতো।
- শূন্যের কিছু বিশেষ ও বিখ্যাত নাম রয়েছে, যেমন- নট (Nought/Naught), Duck ক্রিকেট খেলায়, Nil (বিভিন্ন খেলাধূলায়), Null (ডেটাবেজ কিংবা ম্যাট্রিক্স গণিত) ইত্যাদি।
- পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর ওজন শূন্য।
- পরম তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন শূন্য।
- শূন্য মাধ্যমে শব্দের বেগ শূন্য।
- প্রমান তাপমাত্রা হচ্ছে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- সেলসিয়াস স্কেলে বরফের গলনাংক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- পৃথিবীর বিভব শূন্য।
- পৃথিবীর কেন্দ্রে 'g' এর মান শূন্য।
- গ্রীনিচের দ্রাঘিমা মান শূন্য।
- পৃথিবীর মূল মধ্যরেখার মান শূন্য।
- সুইডেনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য।
- বরিশালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্য।
- বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সত্যতা বুঝালে ইংরেজি ব্যাকরণের ফার্স্ট কন্ডিশনালকে (First Conditional) শূন্য বা জিরো কন্ডিশনাল বলা হয়। যেমন- When/If we heat ice, it melts.
- ২০১৮ সালে শাহরুখ খান অভিনিত একটি মুভির নাম জিরো (Zero); বাংলায় শূন্য।
- ২০২১ সালের মধ্যে ইজিপ্টের নিরক্ষতার হার শূন্য করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
- আমেরিকার একটি বিখ্যাত ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানির নাম জিরোকোম্পানি (zerocompany)।
- পৃথিবীতে ১৭টি দেশ আছে যেগুলোর নদীর সংখ্যা শূন্য (০)। দেশগুলো হলো- বাহামা, বাহরাইন, কোমোরস, কিরিবাতি, কুয়েত, ইয়েমেন, সৌদি আরব, মালদ্বীপ, মাল্টা, মোনাকো, মার্শল দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, ওমান, কাতার, তুভালু, আরব আমিরাত এবং ভ্যাটিক্যান সিটি।
- নরওয়ে, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার খরচ শূন্য। [কিছু শর্ত প্রযোজ্য হতে পারে।]
- সুরেশ রায়না, মাহেন্দ্র সিং ধনী, সোইয়েব মালিক-এর মতো বিখ্যাত ক্রিকেটাররা তাঁদের প্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে Duck বা শূন্য রানে আউট হন।
- নিউজিল্যান্ডের জিওফ অ্যালোট ৭৭ বল খেলে ১০১ মিনিট ব্যাটিং করে শূন্য (০) রানে আউট হয়ে ইতিহাস গড়ে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে এই রান করে শূন্যর দাম বাড়িয়ে দেন। 😁
- নারীদের দৈহিক বিশেষ আকৃতিতে জিরো (শূন্য) ব্যবহার করা হয়। এর আদর্শ মাপ হচ্ছে: ৩০-২২-৩২ ইঞ্চি; যথাক্রমে বক্ষ, কোমড় এবং নিতম্ব।
- Zero বা শূন্য নিয়ে মহাত্মা গান্ধীর একটি মহা মূল্যবান উক্তিও আছে। উক্তিটি হলো- When you make yourself into zero, your power becomes invincible. 💪
এক (১)-এর বৈচিত্র্যময়তা জানতে ক্লিক করুন এখানে। আর আপনাদের কাছে শূন্য সংক্রান্ত কোন তথ্য থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।
0 comments:
__আপনার মতামত নিচে লিখুন। ধন্যবাদ।__