https://edutechinfobd.blogspot.com/ |
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বুদ্ধি, মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা সব দিক থেকেই মানুষ সেরা। বিশ্বকে ধীরে ধীরে সেই আদিম সভ্যতা থেকে আজকের এই অভাবনীয় পর্যায়ে তো মানুষই নিয়ে এসেছে। তাই তো সেই মহান মানবদের কাছে বিশেষ করে যাঁদের হাত ধরে আজকের এই গগণচুম্বী সভ্যতা তাদের কাছে পৃথিবীবাসী ঋণী। কেননা জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির হাত ধরে আজকের পৃথিবী এত বর্ণিল ও আলো ঝলমলে। পৃথিবীতে বসবাসও তাই অনেক সুখকর। আচ্ছা যাদের অবদানে আজকে শিক্ষা সংস্কৃতি বিজ্ঞান আবিস্কার এত দূর এসেছে তাঁরাও তো মানুষই ছিল? তাঁদেরও তো লোভ লালসা ছিল? নাকি ছিল না? আসলে সহজ করে যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো, এই ধরা যাক (এখানে নিকট অতীতের কিছু ব্যক্তিত্বকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) - বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস, টমলিনসন, মাকোর্নি এবং চার্লস ব্যাবেজ এই মহামানবরাও তো আমাদের মতোই রক্ত মাংসের। কিন্তু তাঁদের উদারতায় আজকের পৃথিবী হাতের মুঠোয়। কিন্তু ঐ ব্যক্তিরা যদি আমাদের মতো সাধারণ হতো অর্থাৎ শুধু নিজের চর্চা বা স্বার্থপরতায় ডুবে থাকতো তাহলে কি পৃথিবী এই পর্যায়ে আসতে পারতো? সহজ উত্তর হতো “না”। নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বিশ্ব সভ্যতাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়া আসা মহামানবের সংখ্যা কম নয়। আমরা তো শুধু পায়ের উপর পা তুলে খাওয়া ও ভোগে ব্যস্ত। তাতেও আমাদের অভিযোগের অন্ত নেই। আচ্ছা মহামানবদের কি ভোগ বিলাসীতা বলতে কিছু নেই? নাকি তাঁরা নির্বোধ ছিলেন? কিন্তু নির্বোধ মানুষ তো কিছুই করতে পারে না। সে অর্থে তাঁদের বোধ আছে। এমনকি আমাদের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশিই আছে বলে মনে করি। তাঁদের কি নীতি নৈতিকতা ছিল? হ্যাঁ, থাকাটাই তো স্বাভাবিক। নচেৎ কোন চোর ডাকাত কিংবা ছোট মনের নীতি-নৈতিকতাহীন মানুষকে তো মহা মানুষ বলতে শুনিনি। মজার বিষয়টা এখানেই। এ সমাজ (এখানে বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকেই ইঙ্গিত করা হচ্ছে) অসাধু অসৎ নীতিহীন ব্যক্তিকে স্বীকার করে না অথচ এ সমাজে আজকে নীতিহীন মানুষ ও তাঁদের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হয় নীতিহীন মানুষগুলোই সব নৈতিকতার শিক্ষা দিচ্ছে। তাঁদের কাছেই সব সমাজের সব শিক্ষিতরা নীতি বাক্য শুনতে ভীড় করছে এবং সাথে সাথে হাতে তালিও দিচ্ছে।
যে বিষয়টা নিয়ে এতক্ষণ বলতে চাচ্ছিলাম তা এখন শুরু করা যেতে পারে। আমাদের মানসিকতায় ভাটা পড়েছে। জাগ্রত বিবেক, নীতি, নৈতিকতা, শ্রদ্ধাবোধ, মূল্যবোধ আজ সমাজ থেকে প্রায় বিতাড়িত। মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে সেটি আবার মস্তিষ্কে বসে গেছে যে, টাকাই সব। আর এই ধ্বংসাত্মক মানসিকতাই মানুষকে আজ অশান্ত করে তুলেছে। মানুষের পশুবৃত্তিকে তাড়িত করছে। মানুষ ভুলে যাচ্ছে তারঁ দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য, সততা, মূল্যবোধ এবং জীবনে প্রকৃতি সুখী হওয়ার পথ। বাড়িয়ে দিচ্ছে শতগুণে লালসা এবং জন্ম দিচ্ছে সামাজিক নানা পাপাচারের। ঘর-সংসার, সমাজে-রাষ্ট্রে, অফিস-আদালতে সর্বত্রই এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ আজ প্রায় দিশেহারা। ফলে আরো চাই নামক নতুন রোগে মানুষ আজ আক্রান্ত। এটি এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। যার চিকিৎসক নেই কিন্তু চিকিৎসা আছে। আর সেই চিকিৎসক হচ্ছে ব্যক্তি নিজে এবং তাঁর পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। যা বর্তমানে বাংলাদেশে অপ্রতুল। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মানুষের অস্থিরতা আজ তুঙ্গে। নানা অবক্ষয় আজ সমাজে বিরাজমান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থা আমরা রেখে যাচ্ছি তা কি তাদের জন্য সুখময় হবে? এটাই এখন এক বড় প্রশ্ন। যে সুখের জন্য মানুষ হন্যে হয়ে টাকার পিছনে ছুটছে সেই অর্থ লালসাই কি তাঁর অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে কারো কোন বিকার নেই। একটি অশুভ প্রতিযোগিতা সমাজে লক্ষ করা যাচ্ছে। এবং অর্থই যে অনর্থের মূল তা ধীরে ধীরে প্রকটভাবে প্রমাণিত হচ্ছে। টাকার শক্তির কাছে মানুষের নীতি নৈতিকতা সহিষ্ণুতা মূল্যবোধ শ্রদ্ধাবোধ আজ পরাজিত। অন্যদিকে, টাকা কেনা যায় সব। এই মানসিকতার বশবর্তী হয়ে মানুষ আজ শ্রদ্ধা চাকরি যোগ্যতা সম্মান সব কিনে ফেলার নেশায় মেতেছে। যা দুর্নীতি ও ঘুষের মতো সামাজিক মহা ব্যাধিকে বটবৃক্ষের ন্যায় শক্তিধর করে ফেলেছে। ফলে, তা সহসাই উপড়ানোও যাচ্ছে না।
অর্থ উপার্জনের নেশায় সমাজের সব স্তরে অসাধুতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে বিষ তথা ফরমালিনযুক্ত খাবার কিনে খাচ্ছে। এ কোন আধুনিক আহম্মকি কারবার কিংবা মূর্খতা তা বোঝা দায়। আর টাকায় সব কেনা যায় নীতিই এখন আমাদের সবচে বড় নীতি, যা সকল নীতিবোধকে অন্ধকারে তলিয়ে দিয়েছে। অপরাধ প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে সীমাহীনভাবে। পক্ষান্তরে, ভুলে যেতে বাধ্য করেছে প্রতিবাদের ভাষাকে। মানুষ এখন সামান্যতম প্রতিবাদটুকুও ভুলে গেছে। অফিস আদালতে টাকা ছাড়া হয় না কোন কাজ। দালালদের দৌরাত্ম্য আজ মাত্রাতিরিক্ত। কিন্তু সহজ বিষয়টা আমাদের মাথায় আসে না যে, যে অনিয়মের পাহাড় আজ সমাজে চলছে তাতে করে কেউ-ই একদিন রেহাই পাবো না। শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান খাদ্য এই সব মৌলিক অধিকারের জায়গাগুলো আজ আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং পণ্য হিসেবে প্রতীয়মান। শিক্ষার সাথে আমরা আপোষ করে ফেলেছি। টাকার ঝনঝনানি সেখানেও। কে কত টাকা বেশি দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে এবং তাতে করে আমাদের লোক দেখানো প্রতিভার কতখানি প্রকাশ ঘটবে এই নিয়ে চলছে এক প্রতিযোগিতা। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মান সম্পন্ন শিক্ষা কতটুকু পাচ্ছে কিংবা বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবে কতটুকু যোগ্য করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছে অভিভাবক হিসেবে আমাদের কারো সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। যে কারণে এশিয়ায় উদ্ভাবনী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম তলানিতে। উপরে মহামানবদের নাম আমাদের আবিস্কারি মন ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় করিয়ে দিতেই উল্লেখ করা হয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের আবিস্কার করার নেশা বড়ই অল্প। কিন্তু একজন আরেকজনকে পেছনে টেনে ফেলার নেশা বড়ই ভয়ানক। অন্যদিকে, শিক্ষার মতো চিকিৎসাও আজ অর্থ উপার্জনের বড় মাধ্যম। গলিতে গলিতে স্কুল-কলেজের ন্যায় হাসপাতাল ও ডায়গনোস্টিক সেন্টারের বিশাল সমারহ চোখে পড়ার মতো। আহ্ কি এক আজগবী নীতি বিক্রয়ের ব্যবসা ! আর এসবের মূল কারণ হচ্ছে টাকাই সব। কিন্তু যে ব্যবসায় আজকে আমরা অর্থ কামাই করছি হতে পারে সেই ব্যবসায় একদিন আমার সন্তানকেই বলি দিতে হতে পারে। এটা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমরা? খুবই সহজ-সরল কিছু কথা। কিন্তু আমাদের সমাজ আজ এসবের চর্চাকে লজ্জার এবং নির্লজ্জ কাজকে গর্বের মনে করে। সে অর্থে আধুনিক মূর্খ সমাজ গড়ে তুলছি আমরা নিজেদেরই অজান্তে।
টাকাই সব। এবং অর্থ-বিত্তের উত্তাপ ছড়াতে হবে। তাই তো আজকে আমাদের শিক্ষার দরকার নেই, দরকার হলো চকচকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা। যা জন্মদিচ্ছে ভর্তি বাণিজ্য। বাড়ছে খরচ। আর আমরা সেই অর্থ যোগান দিতে করছি দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য। চিকিৎসার দরকার নেই, দরকার হলো অভিজাত হাসপাতালে গিয়ে অর্থ নষ্ট করা যাতে করে বলতে পারি যে, অমুক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। এসব কি সস্তা মানসিকতা আমাদের। যাদের সামর্থ আছে তাদের কথা ভিন্ন কিন্তু মানুষ ধার দেনা করেও লোক লজ্জার কারণে নামি-দামি হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। অথচ তাদের কেবল দরকার ছিল চিকিৎসা ও শিক্ষা। আরো একবার উপরের নামগুলো স্মরণ করাতে চাই (বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস, টমলিনসন, মাকোর্নি এবং চার্লস ব্যাবেজ)। সকলেরই জানা আছে এদের কয়জন কতটা নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার ও চিকিৎসা সেবা নেবার সুযোগ পেয়েছে প্রথম জীবনে এবং কতটা টাকার নেশা এদের মধ্যে ছিল। কিন্তু তাদের অবদান সারা পৃথিবীতে এনেছে ভিন্ন আমেজ ও বৈচিত্র্য। কোন মহান ব্যক্তিত্বও আজকে আমাদের আকর্ষণ করে না। সমাজ ও পরিবার জুড়ে আজকে চর্চা হয় রাজনীতির এবং কটাক্ষ করার। সংক্ষেপে অতি অল্প সময়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেও মানুষ এখন রাজনীতির দিকে বেশি ঝুকছে। আবার কেরানির চারকি পেতেও লাগে লাখ লাখ টাকা। ঐ যে টাকাই সব, আর তাই এই সব বর্বর নীতি। আমাদের সবটা জুড়েই আছে অর্থ। কিন্তু অর্থ উপার্জনের জন্য যোগ্য করার চেষ্টা নেই কোথাও। অন্যদিকে, কুক্ষিগত করারও একটা চেষ্টা রয়েছে। শিক্ষক চান সব শিক্ষার্থীরা তার কাছে টিউশন নিক, চিকিৎসক চান সবাই তার কাছে আসুক, দুর্নীতিবাজরা চায় দেশের সব তারা একাই ভোগ করবে, ব্যবসায়ী চায় তার একার ব্যবসা টেকাতে যত ছলচাতুরি করতে হয় করবে কিন্তু কেউ সেবা দিতে চায় না। বিশ্বের নামি-দামি প্রতিষ্ঠান যেখানে সেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে এক্চ্ছত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেখানে আমাদের পথ উল্টো। প্রতারণার মাধ্যমে কীভাবে অর্থ কামাই করা যায়। আর এই অর্থ অর্থ করে ঘুষ দুনীর্তি অনিয়মে ছেঁয়ে গেছে গোটা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। আমাদের এই সব ধারণা ও মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই। নয়ত সভ্যতা ও শিক্ষার আলো আমাদের ছোঁবে না, টাকার পাহাড়ও তখন সেই তিমির দূর করতে পারবে না। সুখে সে তো মনের ব্যাপার, স্রষ্টার আর্শীবাদ। আর লালসা ও অহমিকা শয়তানের মারণাস্ত্র। এসব থেকে বের হয়ে আসা জাতিগুলোই এখন সভ্য। আমরা যাদেরকে অনুসরণ করি। কিন্তু এর বিপরীতে স্রোত উল্টো, তলিয়ে যাওয়াই যেখানে স্বাভাবিক।
যে বিষয়টা নিয়ে এতক্ষণ বলতে চাচ্ছিলাম তা এখন শুরু করা যেতে পারে। আমাদের মানসিকতায় ভাটা পড়েছে। জাগ্রত বিবেক, নীতি, নৈতিকতা, শ্রদ্ধাবোধ, মূল্যবোধ আজ সমাজ থেকে প্রায় বিতাড়িত। মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে সেটি আবার মস্তিষ্কে বসে গেছে যে, টাকাই সব। আর এই ধ্বংসাত্মক মানসিকতাই মানুষকে আজ অশান্ত করে তুলেছে। মানুষের পশুবৃত্তিকে তাড়িত করছে। মানুষ ভুলে যাচ্ছে তারঁ দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য, সততা, মূল্যবোধ এবং জীবনে প্রকৃতি সুখী হওয়ার পথ। বাড়িয়ে দিচ্ছে শতগুণে লালসা এবং জন্ম দিচ্ছে সামাজিক নানা পাপাচারের। ঘর-সংসার, সমাজে-রাষ্ট্রে, অফিস-আদালতে সর্বত্রই এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ আজ প্রায় দিশেহারা। ফলে আরো চাই নামক নতুন রোগে মানুষ আজ আক্রান্ত। এটি এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। যার চিকিৎসক নেই কিন্তু চিকিৎসা আছে। আর সেই চিকিৎসক হচ্ছে ব্যক্তি নিজে এবং তাঁর পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। যা বর্তমানে বাংলাদেশে অপ্রতুল। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মানুষের অস্থিরতা আজ তুঙ্গে। নানা অবক্ষয় আজ সমাজে বিরাজমান। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থা আমরা রেখে যাচ্ছি তা কি তাদের জন্য সুখময় হবে? এটাই এখন এক বড় প্রশ্ন। যে সুখের জন্য মানুষ হন্যে হয়ে টাকার পিছনে ছুটছে সেই অর্থ লালসাই কি তাঁর অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে কারো কোন বিকার নেই। একটি অশুভ প্রতিযোগিতা সমাজে লক্ষ করা যাচ্ছে। এবং অর্থই যে অনর্থের মূল তা ধীরে ধীরে প্রকটভাবে প্রমাণিত হচ্ছে। টাকার শক্তির কাছে মানুষের নীতি নৈতিকতা সহিষ্ণুতা মূল্যবোধ শ্রদ্ধাবোধ আজ পরাজিত। অন্যদিকে, টাকা কেনা যায় সব। এই মানসিকতার বশবর্তী হয়ে মানুষ আজ শ্রদ্ধা চাকরি যোগ্যতা সম্মান সব কিনে ফেলার নেশায় মেতেছে। যা দুর্নীতি ও ঘুষের মতো সামাজিক মহা ব্যাধিকে বটবৃক্ষের ন্যায় শক্তিধর করে ফেলেছে। ফলে, তা সহসাই উপড়ানোও যাচ্ছে না।
অর্থ উপার্জনের নেশায় সমাজের সব স্তরে অসাধুতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে বিষ তথা ফরমালিনযুক্ত খাবার কিনে খাচ্ছে। এ কোন আধুনিক আহম্মকি কারবার কিংবা মূর্খতা তা বোঝা দায়। আর টাকায় সব কেনা যায় নীতিই এখন আমাদের সবচে বড় নীতি, যা সকল নীতিবোধকে অন্ধকারে তলিয়ে দিয়েছে। অপরাধ প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে সীমাহীনভাবে। পক্ষান্তরে, ভুলে যেতে বাধ্য করেছে প্রতিবাদের ভাষাকে। মানুষ এখন সামান্যতম প্রতিবাদটুকুও ভুলে গেছে। অফিস আদালতে টাকা ছাড়া হয় না কোন কাজ। দালালদের দৌরাত্ম্য আজ মাত্রাতিরিক্ত। কিন্তু সহজ বিষয়টা আমাদের মাথায় আসে না যে, যে অনিয়মের পাহাড় আজ সমাজে চলছে তাতে করে কেউ-ই একদিন রেহাই পাবো না। শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান খাদ্য এই সব মৌলিক অধিকারের জায়গাগুলো আজ আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং পণ্য হিসেবে প্রতীয়মান। শিক্ষার সাথে আমরা আপোষ করে ফেলেছি। টাকার ঝনঝনানি সেখানেও। কে কত টাকা বেশি দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে এবং তাতে করে আমাদের লোক দেখানো প্রতিভার কতখানি প্রকাশ ঘটবে এই নিয়ে চলছে এক প্রতিযোগিতা। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মান সম্পন্ন শিক্ষা কতটুকু পাচ্ছে কিংবা বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবে কতটুকু যোগ্য করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছে অভিভাবক হিসেবে আমাদের কারো সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। যে কারণে এশিয়ায় উদ্ভাবনী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম তলানিতে। উপরে মহামানবদের নাম আমাদের আবিস্কারি মন ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় করিয়ে দিতেই উল্লেখ করা হয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের আবিস্কার করার নেশা বড়ই অল্প। কিন্তু একজন আরেকজনকে পেছনে টেনে ফেলার নেশা বড়ই ভয়ানক। অন্যদিকে, শিক্ষার মতো চিকিৎসাও আজ অর্থ উপার্জনের বড় মাধ্যম। গলিতে গলিতে স্কুল-কলেজের ন্যায় হাসপাতাল ও ডায়গনোস্টিক সেন্টারের বিশাল সমারহ চোখে পড়ার মতো। আহ্ কি এক আজগবী নীতি বিক্রয়ের ব্যবসা ! আর এসবের মূল কারণ হচ্ছে টাকাই সব। কিন্তু যে ব্যবসায় আজকে আমরা অর্থ কামাই করছি হতে পারে সেই ব্যবসায় একদিন আমার সন্তানকেই বলি দিতে হতে পারে। এটা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমরা? খুবই সহজ-সরল কিছু কথা। কিন্তু আমাদের সমাজ আজ এসবের চর্চাকে লজ্জার এবং নির্লজ্জ কাজকে গর্বের মনে করে। সে অর্থে আধুনিক মূর্খ সমাজ গড়ে তুলছি আমরা নিজেদেরই অজান্তে।
টাকাই সব। এবং অর্থ-বিত্তের উত্তাপ ছড়াতে হবে। তাই তো আজকে আমাদের শিক্ষার দরকার নেই, দরকার হলো চকচকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা। যা জন্মদিচ্ছে ভর্তি বাণিজ্য। বাড়ছে খরচ। আর আমরা সেই অর্থ যোগান দিতে করছি দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য। চিকিৎসার দরকার নেই, দরকার হলো অভিজাত হাসপাতালে গিয়ে অর্থ নষ্ট করা যাতে করে বলতে পারি যে, অমুক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। এসব কি সস্তা মানসিকতা আমাদের। যাদের সামর্থ আছে তাদের কথা ভিন্ন কিন্তু মানুষ ধার দেনা করেও লোক লজ্জার কারণে নামি-দামি হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। অথচ তাদের কেবল দরকার ছিল চিকিৎসা ও শিক্ষা। আরো একবার উপরের নামগুলো স্মরণ করাতে চাই (বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস, টমলিনসন, মাকোর্নি এবং চার্লস ব্যাবেজ)। সকলেরই জানা আছে এদের কয়জন কতটা নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার ও চিকিৎসা সেবা নেবার সুযোগ পেয়েছে প্রথম জীবনে এবং কতটা টাকার নেশা এদের মধ্যে ছিল। কিন্তু তাদের অবদান সারা পৃথিবীতে এনেছে ভিন্ন আমেজ ও বৈচিত্র্য। কোন মহান ব্যক্তিত্বও আজকে আমাদের আকর্ষণ করে না। সমাজ ও পরিবার জুড়ে আজকে চর্চা হয় রাজনীতির এবং কটাক্ষ করার। সংক্ষেপে অতি অল্প সময়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবেও মানুষ এখন রাজনীতির দিকে বেশি ঝুকছে। আবার কেরানির চারকি পেতেও লাগে লাখ লাখ টাকা। ঐ যে টাকাই সব, আর তাই এই সব বর্বর নীতি। আমাদের সবটা জুড়েই আছে অর্থ। কিন্তু অর্থ উপার্জনের জন্য যোগ্য করার চেষ্টা নেই কোথাও। অন্যদিকে, কুক্ষিগত করারও একটা চেষ্টা রয়েছে। শিক্ষক চান সব শিক্ষার্থীরা তার কাছে টিউশন নিক, চিকিৎসক চান সবাই তার কাছে আসুক, দুর্নীতিবাজরা চায় দেশের সব তারা একাই ভোগ করবে, ব্যবসায়ী চায় তার একার ব্যবসা টেকাতে যত ছলচাতুরি করতে হয় করবে কিন্তু কেউ সেবা দিতে চায় না। বিশ্বের নামি-দামি প্রতিষ্ঠান যেখানে সেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে এক্চ্ছত্রভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেখানে আমাদের পথ উল্টো। প্রতারণার মাধ্যমে কীভাবে অর্থ কামাই করা যায়। আর এই অর্থ অর্থ করে ঘুষ দুনীর্তি অনিয়মে ছেঁয়ে গেছে গোটা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। আমাদের এই সব ধারণা ও মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই। নয়ত সভ্যতা ও শিক্ষার আলো আমাদের ছোঁবে না, টাকার পাহাড়ও তখন সেই তিমির দূর করতে পারবে না। সুখে সে তো মনের ব্যাপার, স্রষ্টার আর্শীবাদ। আর লালসা ও অহমিকা শয়তানের মারণাস্ত্র। এসব থেকে বের হয়ে আসা জাতিগুলোই এখন সভ্য। আমরা যাদেরকে অনুসরণ করি। কিন্তু এর বিপরীতে স্রোত উল্টো, তলিয়ে যাওয়াই যেখানে স্বাভাবিক।
সুন্দর ভালো সৌন্দর্য সততা মূল্যবোধ নীতি ইত্যাদির মূল্য পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই আছে এবং থাকবে। আর এদের বিপরীত শব্দগুলোর একটিও ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সুন্দরের জয় হোক, জয় হোক উন্নত মানসিকতার। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত অর্থের পিছনে ছুটে লালসাকে প্রশ্রয় দেওয়াও এক ধরণের হতাশা।
0 comments:
__আপনার মতামত নিচে লিখুন। ধন্যবাদ।__