নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর নামক মসজিদে জুমার সালাত আদায়রত অবস্থায় মুসল্লিদের উপর অস্ট্রেলিয়ার উগ্রপন্থী শ্বেতাঙ্গ অস্ত্রধারী এক সন্ত্রাসী বর্বরোচিত হামলা চালায়। গুলি করে হত্যা করে ৫০ জন মুসলমানকে। আহত হয় আরো ৪২ জন। এ নারকীয় ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু এই আলোচনা সমালোচনার বিপরীতে আপনার আমার সকলের মনের কোণে নিজেদেরেই অজান্তে এক চরিত্র সবাইকে মুগ্ধ করেছে। তিনি হলেন জাসিন্ডা আরডের্ন। পুরো নাম জাসিন্ডা কেট লরেল আরডের্ন। তিনি নিউজিল্যান্ডের ৪০তম প্রধানমন্ত্রী। ২৬ অক্টোবর, ২০১৭ সাল থেকে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশটির লেবার পার্টির ১৭ তম সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। জাসিন্ডা ১৯৮০ সালে নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টন শহরে জন্মগ্রহন করেন। বাবা রজ আরডের্ন পুলিশ অফিসার এবং মা লরেল আরডের্ন ছিলেন একটি স্কুলের ক্যাটারিং সহকারি। কলেজে পড়ুয়া অবস্থাতেই তিনি স্কুল বোর্ড অব ট্রাস্টির স্টুডেন প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। ফলে নেতৃত্বের গুণাবলি চরিত্রগত হয় ছাত্র জীবনেই। ২০০১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইকাটো থেকে ব্যাচেলন অব কমিউনিকেশন স্টাডিস ইন পলিটিক্স এর উপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন । ২০০৮ সালে দেশটির সর্ব কনিষ্ট এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তিনি লেবার পার্টি থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেন। ১৮৫৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জাসিন্ডা আরর্ডান। এক দক্ষ রাজনীতিকের সমস্ত গুণাবলিই তার ম্ধ্যে বিদ্যমান। যে কারণে গত এক সপ্তাহে গোটা বিশ্বের মানবতাপ্রেমি মানুষের অকুন্ঠা ভালোবাসা কুড়িয়েছেন দু হাতে।
সে অর্থে তিনি যখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স মাত্র সাইত্রিশ। বয়সে নবীন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বের অনেক প্রবীন ও বিশাল অভিজ্ঞ নেতাদের চেয়ে বিশ্ব মানবতা ও ইসলামের পক্ষে এক সাহসী লৌহ মানবীর রূপ নিয়ে মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর এই ঘটনাই মুগ্ধ করেছে বিশ্ববাসীসহ গোটা মুসলিম উম্মাহকে। দেশটির সংসদে বক্তব্যকালীন তিনি হামলাকারী ঐ সন্ত্রাসীর নাম মুখে উচ্চারণ করেননি। তার মতে, এমন জঘন্য ও ঘৃনিত ব্যক্তির নাম তিঁনি মুখে আনতে চান না। শুধু তাই নয়, মুসলিম বিশ্বের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান ও নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াতের মাধ্যমে তিনি সংসদ অধিবেশন শুরু ব্যবস্থা করেন । তিঁনি তাঁর বক্তব্যের আগে সবাইকে সালাম জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। ঘোষনা দেন নিউজিল্যান্ডে মিলিটারি স্ট্যাইলের সব ধরণের অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করবেন। নিহতদের ও মুসলমানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে দেশটির জুমার আযান রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচারের নিদের্শ দেন। এর আগে জাসিন্ডা আরডার্ন আরো বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- পারষ্পরিক ভালোবাসা ও সহানুভূতি দিয়ে একটি শরীরের মতো থাকবেন। যখন শরীরের কোন অঙ্গে ব্যাথা হয় তখন পুরো শরীরের ব্যথা হয়। ইসলামে উদ্বৃতি টেনে এমন বক্তব্যে বিমোহিত হন সবাই। এ যেন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন। অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মুসলামন হত্যার প্রতিশোধের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এরদোগানের সাথে সাক্ষাৎ ও এ ব্যাপারে কথা বলতে তুরস্ক সফরের ঘোষণা দেন।
ইসলামবিদ্বেষী খ্রিষ্টান সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ থেকে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি এসেছে ইতিমধ্যেই।
উল্লেখ্য, আমেরিকা রাশিয়া কোরিয়ার মতো দেশের নেতারা অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী বছরের পর বছর নানা আলটিমেটাম দিয়েই আসছে। কার্যত কোন কিছু হচ্ছে না। কিন্তু জাসিন্ডা একাই সেই পথকে সুগম করার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর থেকে জ্যাসিন্ডা ভূমিকা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসায় মেতে গোটা বিশ্বের মিডিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ ইত্যাদি কারণে দিনকে দিন বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা কেবলই অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছিল। আর তখনই আশার আলো দেখাচ্ছেন এই ৩৯ বছর বয়সী নারী নেতা। বিশ্বের কাছে ইতিমধ্যেই তিঁনি অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে উঠেছেন। জাসিন্ডার কথা স্পষ্ট, সন্ত্রাস মানবতার শত্রু এবং কোন বিশেষ ধর্মের বা গোত্রের হতে পারে না। সন্ত্রাস সন্ত্রাসই।
গত বছর ২১ জুন, ২০১৮-তে জাসিন্ডা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম নেভে তে আরোহা। স্বামী ক্লার্ক গেফোর্ড, দেশটির রেডিও এবং টেলিভিশনের উপস্থাপনায় কাজ করেন। একমাত্র বড় বোন লুইস থাকে লন্ডনে।
0 comments:
__আপনার মতামত নিচে লিখুন। ধন্যবাদ।__