Sunday, January 27, 2019

Coaching Business | কোচিং কি বাণিজ্য নাকি জাতীয় ধ্বংস

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। একজন গর্বিত নাগরিক মনে হয় নিজেকে। কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো শিক্ষা। সমাজ ও জাতিকে সভ্য করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। বিকল্প নেই ব্যক্তিগত উন্নতিকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রেও। আর সেই অস্ত্রকে যখন আমরা মানে একটি জাতি ভোতা করে ফেলি তখনই পিছিয়ে পড়ার ভয় ও সংশয় দেখা দেয়। শিক্ষা ও কোচিং বাণিজ্য জাতিকে সেই ভয়াল পথে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। 
শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে না এমন জাতি নেই। অতি দরিদ্র রাষ্ট্রটিও তার জাতিকে তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত করার সর্ব পন্থা ও সর্ব চেষ্টাটি অবলম্বন করে। আমাদের দেশেও তাই। বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখার খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা। আর এই বাজেট ব্যয় করা হয় জাতির ভবিষ্যৎকে মজবুত করবার লক্ষ্যে। তাহলে প্রশ্ন হলো শিক্ষা খাতে যদি ব্যয়ই করা হবে, তবে আয় করার মানসিকতা কেন? শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয় পুঁজি হিসেবে। আর এই পুঁজিই এক সময় জাতিকে চট্ করে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সরকার টাকা ব্যয় করছে জাতিকে গড়ার লক্ষ্যে অথচ তাদের সে চেষ্টাকে ব্যাহত করছে কতিপয় কোচিং ও শিক্ষা বাণিজ্য নামধারীরা। প্রশ্ন আসে শিক্ষাকে যারা পণ্য বানিয়ে বিক্রি করছে এবং সরকারের চেষ্টাকে ব্যাহত করছে তাঁরা কি জাতির জন্য মঙ্গলজনক? সরকারই বা কেন দৃঢ় ও উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
 এ যেন তলা ফুটো কলসিতে পানি ঢালার অবস্থা ! একদিকে পানি মানে অর্থ ব্যয় করছে সর্বোচ্চ হারে, অন্যদিকে সেই পানি তথা অর্থ অপচয় রোধের বা সদ্ব্যবহারের কোন ‍সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই।
এভাবে চলতে থাকলে দেশে শিক্ষাকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। ফরমালিনযুক্ত খাবার খেয়ে না হয় কয় বছর বাঁচতে পারে একটি জাতি। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত শিক্ষা দিয়ে কেবল ধ্বংসই হওয়া যায়। হু-হু করে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠছে। যে, যেখানে খুশি, যেমনভাবে ইচ্ছা, যেমন খুশি পাঠ পদ্ধতি, ইচ্ছে মতো পছন্দের লোক ও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকের মতো গুরু দায়িত্ব অর্পণ এবং মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ ইত্যাদি হলেই যে কেউ-ই এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করেন। এটি এখন এক ভয়ানক মানসিকতা। লক্ষ্য একটাই কিছু ছাত্রছাত্রী হলে একটা নিয়ম করে কোচিং চালু করে দিয়ে অর্থ উপার্জন করবো পায়ের উপর পা তুলে। নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে আমরা ভাবছি না যে, এতে করে কাদের সর্বনাশ হবে। সর্বনাশ তো দিন শেষে আমাদেরই হবে। আমাদের সন্তানদের। আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের। আমাদের লক্ষ্য শুধু টাকা।
https://edutechinfobd.blogspot.com
বাস্তবতা এখন ভয়াবহ। অধিকাংশরাই এখন শিক্ষকতা পেশায় আসেই কেবল কোচিং করাবে এই ভেবে। কোচিং করাতে পারলে অনেক টাকা আয় হবে। এই মানসিকতাই শিক্ষাকে আজ পণ্য  এবং পণ্য থেকে শিক্ষার এই বাণিজ্যিক অবস্থা। আর মাথা ব্যথা পুরো জাতির। সরকার ও মন্ত্রাণালয় কদিন পর পর শুধু হুঙ্কার দিয়ে চুপ হয়ে যায় কোন এক অদৃশ্য অপচেষ্টায় ! তাছাড়া শিক্ষকদের একার দোষই বা দেই কী করে। বর্তমান বিশ্বে কেবল একমাত্র বাংলাদেশেই শিক্ষকদের অনুদান (সরকারি ভাতা) মানে দয়া দেওয়া হয়। এখন রাষ্ট্রই যদি তার শিক্ষক সমাজকে দয়া করে তাহলে দয়া থেকে তো আর আত্মবিশ্বাসী সেই নৈতিকতায় ভরা ও টগবগে জ্ঞান পিপাসু এবং জ্ঞান বিরতণকারী কাউকে পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে না গবেষক। কেননা, শিক্ষক তো তার পরিবারের ভরণ পোষন যোগাতেই ব্যস্ত। সারা দিন বিদ্যালয়ে পড়িয়ে মাসে সে যা পায় তা দিয়ে একটি সংসার এক মাসের তো দূরের কথা এক সপ্তাহের কয়দিন চলে এটাই একটা প্রশ্ন। 
শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ও সাংসারিক বাস্তবতাকে এড়িয়ে কোচিং বাণিজ্য দূর করা সহসাই সম্ভব নয়। দরকার সামাজিক সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় ভাবে শিক্ষা ও শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করা।
কোচিং কোচিং করে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশির ভাগ অভিভাবকদেরই কোচিংয়ের প্রতি আগ্রহ এখন বেশি। কোচিং বাণিজ্যিকীকরণ করার ক্ষেত্রে এটিও নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। বাজারে প্রচলিত এই সব কোচিং সেন্টারগুলো সম্পর্কে তাদের ধারণাও এখন এমন যে স্কুল কলেজে পড়ানো হয় না, তাই কোচিংয়ে পড়ালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ঘাটতি দূর হবে। তাদের শিক্ষা ফলপ্রসূ হবে। এখানে শিক্ষার গুণগত মান ও কারা কোচিং করাচ্ছে, কোচিং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় কিনা, বিশ্বের আর কোন দেশে এই পদ্ধতি আছে কিনা, স্কুল কলেজ থাকা একটি দেশে কোচিং আবার কি কাজের, কোচিংয়ে ব্যয়কৃত অর্থ অর্থ অপচয় কিনা, মান-সম্পন্ন শিক্ষক কোচিং সেন্টারগুলোতে আছে কিনা এবং সর্বোপরি কোচিং করে নম্বর তো বেশি পাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেলো কিন্তু জ্ঞানার্জনটা সঠিক হলো কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারে অভিভাবকবৃন্দও কেমন যেন উদাসীন। আর এই সুযোগে এক শ্রেণি হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। বাণিজ্যিকীকরণ হচ্ছে শিক্ষা। ভোগান্তি পোহাচ্ছে নিম্ন ও সাধারণ শ্রেণির অভিভাবকবৃন্দ।
কোচিং সেন্টারগুলোই যদি একটি দেশের শিক্ষার দায়িত্ব তুলে নেবে তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারকর্তৃক হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার দরকার কী? কোচিং সেন্টারেই যদি সব হয় তাহলে সরকারের উচিৎ হবে এগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া নচেৎ কোচিংয়ের হাত থেকে শিক্ষাকে বাঁচাতে এখনই তড়িৎ নীতিমালা গঠন করে এসব বন্ধ করা।
সম্প্রতি গত ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে হাইকোর্ট কোচিং বাণিজ্য বন্ধের জন্য ২০১২ সালে সরকারের করা নীতিমালার পক্ষে রায় দেয়। এর আগে উক্ত নীতিমালার বিরুদ্ধে রিট করা হলে তা স্থগিত হয়ে যায়। অবশেষে, এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা বৈধতা পেল।

  নীতিমালাটি দেখুন এখানে।

0 comments:

__আপনার মতামত নিচে লিখুন। ধন্যবাদ।__