Wednesday, February 13, 2019

Nepal First Supercomputer - নেপালের প্রথম সুপার কম্পিউটার

বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত কোন সুপার কম্পিউটারের যাত্রা আরম্ভ হয়নি। তবে বাংলাদেশ সরকার দেশে সুপার কম্পিউটারের জয়যাত্রার লক্ষ্যে কাজ করে যাচেছ। অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে ইতিমধ্যেই ভারত তাদের সুপার কম্পিউটার স্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে নেপালও তাদের জয়যাত্রা শুরু করেছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে।

https://edutechinfobd.blogspot.com/2019/02/nepal-first-supercomputer.html

নেপালের বানিপা-র আইটি পার্কে স্থাপিত এই সুপার কম্পিউটারটির তত্ত্ববধানের দায়িত্ব পেয়েছে কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়। CERN (The European Organization for Nuclear Research) ভুক্ত দেশ সুইজারল্যান্ড এই সুপার কম্পিউটারটি নেপালকে ডোটেন করে। মূলত নতুন কোন ভার্সনে উন্নিত হওয়ার পূর্বে ডিজিটালি উন্নত দেশগুলো ২-৩ বছরের ব্যবহৃত তাদের সুপার কম্পিউটারগুলো আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে দান বা ডোনেট করে দেয়। নেপালও তাদের দেশের প্রথম সুপার কম্পিউটারটি একইভাবে পেয়েছে। অবশ্য এজন্য তারা ২০১৩ সাল থেকে ‍সুইজারল্যান্ডের সাথে তাদের আলোচনা চালিয়ে গেছে। অবশেষে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছেছে। কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক ও  কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মনজ সাকিয়া জানান, নতুন স্থাপিত এই সুপার কম্পিউটারটির কম্পিউটিং সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধান দিতে মাত্র দুই ঘন্টা সময় লাগবে। আগে এই একই ধরণের সমস্যার সমাধান পেতে তাঁদের ১০ দিন সময় লাগতো। নেপালের এই সুপার কম্পিউটারটিতে রয়েছে-
  • ১৮৪ টি সিপিইউ সার্ভারস
  • ১৬ টি ডিস্ক সার্ভারস
  • ১২ টি নেটওয়ার্ক সার্ভারস
  • ২,৫০০-র উপরে প্রসেসরস
  • ৮ টেরাবাইট মেমোরি
  • এটির ওজন ৫ টন
বর্তমানে এই সুপার কম্পিউটারটি সেদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি পরিচালনা করতে ২০০ কেভি (কিলো-ভোল্ট) বিদ্যুৎ প্রয়োজন যদিও আইটি পার্কটিতে ৩১৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। ডেটা সেন্টারের ব্যাক আপ, আবহাওয়ার পূর্ভাবাস, ভূমিকম্পের আগাম বার্তা, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ, জেনেটিক বিশ্লেষণ, বিভিন্ন রোগের উৎপত্তি, পরিবেশগত উপাত্ত বিশ্লেষণ ইত্যাদিত কাজে এই সুপার কম্পিউটারটি ব্যবহার করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা ও রোগ নির্ণয়ের কাজে এই কম্পিউটারটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এটি তিন হাজার ডেস্কটপ কম্পিউটারের কাজ একাই করতে সক্ষম। এই সুপার কম্পিউটারটির মধ্য দিয়ে নেপাল সুপার কম্পিউটার ব্যবহারের বিশাল ক্ষেত্রে প্রবেশ করল। যুক্তরাষ্ট্রের আরকান্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি স্থাপনে নেপালকে সহায়তা করেছে। জাতীয় ডেটা সেন্টার এবং তার যাবতীয় তথ্য ভান্ডার বিশ্লেষণ করা কাজে সুপার কম্পিউটারের বিকল্প নেই।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে গবেষণা, বিশ্লেষণ, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পরিবেশগত পর্যালোচনা, নদী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগের উৎপত্তি ও নিরাময়, নিউক্লিয়ার গবেষণা, মহাকাশ গবেষণা, শিল্প-কলকারখানার তথ্যাদি, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী তথ্য উপাত্ত ও ফলাফলের জন্য সব সময় উন্নত দেশগুলোর উপর নির্ভর করতে হয়। এর কারণ হচ্ছে আমরা হয়ত আমাদের প্রয়োজন মতো জাতীয় তথ্য ভান্ডার ও সেগুলো সংরক্ষণ কেন্দ্র বানিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু এই বিশাল তথ্য ভান্ডারের তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ভুল রিপোর্ট বা ফলাফল পাই না। কেননা এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সুপার কম্পিউটার। যার রয়েছে বিশাল তথ্য ভান্ডার নিয়ে কাজ করা শক্তি। এবং সুপার কম্পিউটারগুলো বিভিন্ন ধরণের তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে একই সাথে বিভিন্ন কাজের নির্ভুল ফলাফল প্রদান করতে পারে।
একটি সুপার কম্পিউটার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গগণা কাজ এক সেকেন্ডেই করতে পারে। যে কাজটি করতে হয়ত মানুষের বছরের পর বছর লেগে যাবে। উন্নত বিশ্বে দেখা যায় একটি ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারের উপর নির্ভর করেই তাঁদের জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইনস্যুরেন্স, স্বাস্থ্য সেবা, চাকুরি, ব্যবসা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, পাসপোর্ট, শিক্ষা, বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি সব ধরণের কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। আর আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা করে কাগজপত্র ও ফাইল তৈরি করতে হয়। অফিসে অফিসে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। কিন্তু সুপার কম্পিউটার থাকার ফলে একই ডেটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায় একই ডেটাবেজ থেকে। ফলে, বিভিন্ন কাজের জন্য ভ্ন্নি ভিন্ন ডেটাবেজ তৈরি করে সময় ও অর্থ অপচয় করার দরকার হয় না। বাংলাদেশের কথাই যদি ধরি, তাহলে আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশে ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট তৈরি, যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, ভূমি সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অফিসে নিজের পরিচয় সংক্রান্ত একই ধরণের তথ্য বারবার প্রদান করতে হয়। যার ফলে সময়, অর্থ ও হয়রানি হওয়ার সুযোগের সাথে সাথে দুর্নীতির পথও তৈরি হয়। অন্যদিকে, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সুপার কম্পিউটার দেশের সকল নাগরিকের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নাগরিকের চারিত্রিক বিষয়াদি ও কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সুপার কম্পিউটারটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। এর আগে এই গৌরব ছিল চিনের দখলে। কিন্তু পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা সুপার কম্পিউটারটি চিনের সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সুপার কম্পিউটারটি চিনের সুপার কম্পিউটারটির চেয়ে প্রায় ১২ গুণ বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন। এর নাম “সামিট”। বলা হয়ে থাকে, এক সেকেন্ডে সামিট যে গগণা সম্পন্ন করতে পারে বর্তমান বিশ্বের সব জনগণ মিলে প্রত্যেকে যদি প্রতি সেকেন্ডে এক টানা একটি করে গগণা কার্য সম্পন্ন করে তাহলেও সামিটের এক সেকেন্ডের গণনার সমান কাজ করতে পৃথিবীবাসীর এক বছর সময় লাগবে।
আশা করি, বাংলাদেশও অদূর ভবিষ্যতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহারের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশাল কর্মযজ্ঞে তার সুখ্যাতি ছড়াবে।

0 comments:

__আপনার মতামত নিচে লিখুন। ধন্যবাদ।__