দোষে গুণে মানুষ। নিজেকে সার্বক্ষণিক সচেতন রাখা একটা দীর্ঘ চর্চার বিষয়। হঠাৎ করেই সু-অভ্যাসগুলো আপনি রপ্ত করতে পারবেন না। কিন্তু এই রপ্ত করতে না পারার সুযোগে বদভ্যাসগুলো পৃথিবীতে স্রষ্টাকর্তৃক প্রদত্ত সবচেয়ে দামী নিয়ামত এবং মহা মূল্যবান মানব ব্রেইন বা মস্তিষ্কটিকে আমাদের নিজেদেরই অজান্তে নিরবে শেষ করে ফেলে। অথচ সেই বদভ্যাসগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। মানি না। অনিদ্রা, পানির অভাব, চিনি, মানসিক চাপ, ধূমপান, অধিক আহার এবং সকালের নাস্তা পরিহার- এই ৭টি বদভ্যাস বা কারণই আপনার দেহের মহা মূল্যবান এবং অদ্বিতীয় যন্ত্রটিকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করছে ঘুন পোকার মতো। এবার চলুন জেনে নেই ঐ সাতটি কারণ কীভাবে আমাদের ব্রেইনকে ধ্বংস করছে।
😟 ১।। মানসিক চাপ
মানসিক চাপ মানুষের সব সময়ের শত্রু। আর এই একই শত্রু মানুষের ব্রেইনকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। এবার চলুন জেনে নেই ঐ সাতটি কারণ কীভাবে আমাদের ব্রেইনকে ধ্বংস করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ বেইনের জন্য ক্ষতিকর। কেননা, অধিক মানসিক চাপ সাধারণ সময়ের চেয়ে মানসিক চাপের থাকার সময় অপেক্ষাকৃত কম নিউরণ (মাইলিন) সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, নিউরণ মানবদেহের অন্যান্য কোষের মতোই এক ধরণের কোষ কিন্তু অন্য কোষের সাথে এর পাথর্ক্য হলো এটি শরীর বিভিন্ন অঙ্গের সাথে ব্রেইনের তথ্যাদি আদান-প্রদানে সাহাহ্য করে। অর্থাৎ এই বিশেষ কোষটি স্নায়ুবিক গঠনে সাহায্য করে এবং দেহের সাথে ব্রেইনের সিগনাল আদান-প্রদান করে থাকে। মানসিক চাপের কারণে এই মাইলিন নামক নিউরণ দুর্বল হয়ে পরে এবং আমাদের ব্রেইন থেকে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে সিগনাল প্রেরণে সমস্যা হয় বা দেরি হয়। শুধ তাই নয়, মানসিক চাপ আমাদের ব্রেইনের গঠন/আকৃতিকেও পরিবর্তন করতে পারে। মানিসক চাপের ফলে আমাদের ব্রেইনের উপকারি কোষগুলো ধ্বংস হয়ে কমে যেতে থাকে। এর ফলে ব্রেইনের এমন কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার কারণে মানুষের আবেগ-অনুভূতি এবং স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে। মানসিক চাপ আমাদের ব্রেইনকে ছোট করে ফেলার মতো ভয়াবহ কাজটিও করে থাকে। আর তাই, সুস্থ ব্রেইনের জন্য মানসিক চাপ পরিহার একান্ত জরুরি। ইতিবাচক চিন্তা এক্ষেত্রে আমাদেরকে সহায়তা করলেও দু:শ্চিন্তা মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। কাজেই দীর্ঘমেয়াদী দু:শ্চিন্তার আড়ালে আপনার মানসিক চাপের মতো বদভ্যাসটি গড়ে উঠতে পারে। দু:শ্চিন্তা পরিহারের সাথে সাথে মানসিক চাপও আশানুরূপভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাছাড়া, ব্যক্তি জীবনে সৎ থাকা এবং সৎ কাজের সঙ্গে জড়িত থেকে সু-অভ্যাস গঠন করলেও আমাদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব।
🛌 ২।। অনিদ্রা
🥘 ৩ ।। সকালের নাস্তা পরিহার
শক্তিশালী ব্রেইনকে ধীরে ধীরে কর্মহীন বা কর্মে গতি রোধ করবার আরেকটি বদভ্যাস হলো সকালের নাস্তা পরিহার করা। সকালে আমাদের প্রত্যেকের অফিস-আদালত বা বিভিন্ন কর্ম থাকে। কিন্তু তাড়াহুড়া কিংবা ঘুম থেকে দেরি করে উঠার কারণে আমরা অফিসের দেরি হওয়াকে এড়াতে সকালের নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়ি কাজের উদ্দেশ্যে।
🙏 ৪ ।। ধূমপান
ধূমপানের ক্ষতিকারক দিকসমূহ আলোচনা করার কিছু নেই। কম বেশি সবাই এ বিষয়ে আমার চেয়েও বেশি জেনে থাকবেন। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ ও কর্মে ধূমপানের বদভ্যাসের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং, ব্রেইনেও এর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতা রয়েছে। সিগারেটের নিকোটিন ব্রেইনের কার্যকারিতা পরিবর্তন করতে সক্ষম। নিকোটিন ব্রেইনে এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করে যে ধূমপায়ী যদি ধূমপান না করে তবে তার ব্রেইন অবসাদগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে, ধীরে ধীরে এর ডোজের মাত্রা কিংবা সেবন ক্ষমতা বাড়তে থাকে। যে কারণে এক সময় যে ব্যক্তি দুই একটা সিগারেট শখের বশে পান করতো এখন তাঁর এক থেকে দুই প্যাকেট সিগারেট প্রয়োজন হয়। আর এরই মাঝে ধীরে ধীরে ব্রেইনের নিউরণগুলো তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। ধূমপায়ীর ব্রেইন তখন নিকোটিনের সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করে। নিকোটিন বা সিগারেট ছাড়া ধূমপায়ী তখন বেশিক্ষণ মনোযোগ দিয়ে তাঁর স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। শুধু তাই নয়, নিকোটিনের ফলে ব্রেইনে নতুন করে কোষ জন্মাতে বা বৃদ্ধি পেতে পারে না। বরং নিউরণ কোষগুলো ধীরে ধীরে আরো কমতে থাকে।
🥃 ৫।। পানি শূন্যতা
মানবদেহের ৭০ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত। কাজেই পানি সর্বময় উপকারিতা ও গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পানিই মানবের জীবন। তবে অবশ্যই সেটি হতে হবে বিশুদ্ধ। দূষিত পানির বরং মৃত্যুর কারণও হতে পারে। শরীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে পানি অনেক বেশি কাজ করে থাকে। পৃথিবীতে পানিই একমাত্র নিয়ামত যেখানে খাদ্যের ৬টি উপাদানই এক সাথে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, আমাদের ব্রেইনের চার ভাগের তিন ভাগই পানি। কাজেই শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে ব্রেইন সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে এর প্রভাবে মানুষের আচরণ তথা মুড বদলে যায়। ক্লান্তি ঘিরে ধরে আমাদের। শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি পরিলক্ষিত হয়। আপনার শিশু বা সন্তান যদি কোন কারণ ছাড়া অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায় কিংবা উত্যক্ত করে তবে ধরে নিবেন তার শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে বা সে পর্যাপ্ত পানি পান করছে না দীর্ঘক্ষণ। বেশি বেশি পানি পান করালে শিশুদের বিরক্ত হওয়ার এবং বিরক্ত করার দুটো দিকই নিয়ন্ত্রিত হয়। পানির শূন্যতায় ব্রেইনে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে।
🥘 ৬।। অতিরিক্ত ভোজন
অতিরিক্ত ভোজন এবং বিশৃঙ্খল খাদ্যাভাস একটি মারাত্মক বদভ্যাস। এটি ব্রেইনের নিউরোবায়োলজি সিস্টেমকে নষ্ট করতে থাকে। ফলে ব্রেইনের সেল বা কোষগুলো ধ্বংস হতে থাকে। এতে করে ব্রেইনের গঠন পরিবর্তিত হতে পারে। হার্টের বিট বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ব্রেইনে অক্সিজেন চলাচল কমে যায়। ফলে ব্রেইন দুর্বল হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ভোজন স্থূলতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং ডায়বেটিক্সের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে।👊 ৭।। মাত্রাতিরিক্ত চিনি
মিষ্টি কার না ভালো লাগে। ডেজার্ট বা খাবার পর মিষ্টি খেলে তা হজমে সহায়তা করে। যে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবারই মুখরোচক। বিভিন্ন উৎসবের সাথেও মিষ্টি খাবার একটি অপরিহার্য অংশ। আর মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরির প্রধান উপকরণ হলো “চিনি”। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতি ভোজন, দুর্বল স্মৃতিশক্তি গঠন, কোন কিছু শেখায় অনাগ্রহ এবং অবসাদ ইত্যাদির সাথে অতিরিক্ত চিনির কোন না কোন ধরণের যোগসূত্র রয়েছে। ব্রেইন বা মস্তিষ্কে মাত্রাতিরিক্ত চিনি আমাদের স্মরণশক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ উভয়ক্ষেত্রেই ক্ষতিসাধন করে। একই সাথে মনোযোগের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের চিনি ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাছাড়া ডায়বেটিক্সের উপর চিনির আলাদা একটি প্রভাব রয়েছে। এর ফলে রক্ত গঠন নষ্ট হয়ে যায়। সেই জন্য চিনির অভাব সরাসরি চিনি বা পরিশ্রুত চিনির দ্বারা পূরণ না করে ফলমূলের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পূরণ করলে শরীর এবং ব্রেইনের জন্য ভালো ও উপকারি তো বটেই।
উক্ত বদভ্যাসগুলো ছাড়াও দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের ব্যবহার, বায়ু দূষণ, অসুস্থ অবস্থায় কাজ করা, কদাচিৎ কথা বলা বা একেবারেই কম কথা বলা, মস্তিষ্ককে কাজে ব্যস্ত না রাখা অর্থাৎ সুস্থ ও ইতিবাচক চিন্তার খোরাকি যোগাড় না করা- ইত্যাদি কারণেও আপনার ব্রেইনটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
0 comments:
__আপনার মতামত নিচে লিখুন। ধন্যবাদ।__