Skip to main content

আইন নাকি নিয়ম মানতেই আমাদের যত ভয়

https://edutechinfobd.blogspot.com
 রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ থেকেই উঠে আসে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। কাজেই সাধারণ জনগণ বদলে গেলে বদলে যায় রাষ্ট্রীয় জীবনযাত্রা তথা রাষ্ট্রের চেহারা। সে অর্থে রাষ্ট্র বদলাতে তেমন কোন আলাদিনের প্রদীপ লাগে না। প্রয়োজন হয় শুধু মানসিক ও অভ্যাসের ইতিবাচক পরিবর্তন। আর সেই ইতিবাচক পরিবর্তনের রূপরেখা বা লিপিবদ্ধ একগুচ্ছ কথামালাকে আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার সাথে পালনের নামই বোধ করি আইন-কানুন বা নিয়ম-কানুন।

আইন-কানুন কথাটি শুনলেই আমরা কেমন যেন একটু ভয় অনুভব করি। আসলেই কি আইন এজন্য যুগে যুগে মানুষ তৈরি করেছে? যদি তাই-ই হয় তবে কেন মানুষ নিজেই নিজের ক্ষতি করবে আইনের দ্বারা? নিজেকে শৃঙ্খলিত করবে? মানুষের জীবনকে পরিচ্ছন্ন করতেই আইন। রোম সভ্যতা, গ্রীক সভ্যতা ইত্যাদি পৃথিবীর সভ্য সমাজগুলো আইন মানতে ও পালন করতে করতে আজকের এই সভ্যতায় উপনীত হয়েছে। মানুষ হয়েছে আদিম প্রাণি থেকে সভ্যতম জাতি। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপটে মানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা একটু ভিন্ন। এখানে আইন বা নিয়ম মানাতেই যেন যত অসম্মান ও কুন্ঠাবোধ। বরং আইন না মানাতেই যত গৌরব। ঐ যে আগেই বলেছি, সাধারণ জনগণ থেকেই উঠে আসে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, তাই আইন কি সাধারণ মানুষ মানতে চায় না নাকি আইন মানুষের মানার মতো হচ্ছে না আজকের বাস্তবতায় সেটিও একটি ভাববার বিষয়। কিন্তু শৃঙ্খলা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া পর্যন্ত একটি জাতি কি তার লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারে? একটি অগোছালো ঘরে কতক্ষণ মানুষ স্বস্ত্বিবোধ করে? ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনে যদি শৃঙ্খলা না থাকে তবে সে দেশে কী করে সভ্যতা ও স্থিরতা বৃক্ষের ন্যায় গোড়া শক্ত করে দাঁড়াবে? প্রকৃত অর্থে আইন তাই-ই যা সাধারণ মানুষের কল্যাণের দিকটা স্পষ্ট করে। কোন দুর্বোধ্য বাধা কখনোই আইন নয় কিংবা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে অস্থির করে তোলাও আইন নয়। সাদা চোখে যা বোঝায় তা হলো, কতগুলো নিয়ম যখন মানুষ মানতে আরম্ভ করে তার সুফল ভোগ করতে থাকে, তখন সেই নিয়মগুলোর নির্জাসই হলো আইন। আর এই আইনের সাথে মেধা ও জ্ঞানের সংযোগ স্থাপন করা হয় যাতে করে আইনটি দীর্ঘস্থায়ী ও অধিকতর কল্যাণকর হয় রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য।
অতি ক্ষুদ্র এবং সহজএকটি উদাহরণ দেই। যেহেতু আমরা সহজ সরল একটি জাতি। ধরা যাক আমরা ভাত খেতে বসবো এবং ভাত খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন বলে দেওয়া হলো।
  • ফুল হাতা শার্ট পরিধান করে ভাত খাওয়া যাবে না।
  •  মাটিতে বসে ভাত খাওয়া যাবে না।
  • ফুল-হাতা শার্ট বা জামা পরিধান করা থাকলে তা গুটিয়ে নিতে হবে।
  • কাচের থালায় ভাত খাওয়া যাবে না, ভেঙে যেতে পারে।
  • পানি না থাকলে ভাত খেতে পারবো না।
  • অবশ্যই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তরকারিসহ ভাত খেতে হবে।
  • ভাত খাওয়ার পর হাত ধুতে হবে, ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হলো আইনের কি এই সঙ্গা যে, যা খুশি ক্ষমতা বলে প্রয়োগ করতে পারাই হলো আইন? উপরের ভাত খাওযার নিয়ম দেখার পর কে আছে যে তা মানতে চাইবে। নাকি আইন তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছি বলে কিছু একটা আইন বা নিয়ম বানাতে হবে, সে হোক কিংবা নাই হোক। অথচ লক্ষ করলে দেখা যাবে মূল নিয়মটিই বাদ পরে গেছে আইনকে অতিরঞ্জিত করার প্রতিযোগিতায়। অত কিছু বাদ দিয়ে যদি একটি মাত্র লাইন লিখা হতো আইন হিসেবে তা হলে সাধারণ মানুষের বুঝতেও সুবিধা হতো আবার তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারার ফলে মানুষ আইনের ভালো দিকগুলো বুঝে এবং আত্ম কল্যাণের কথা চিন্তা করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলও হতো। আর সেটি হলো-“খাবারের আগে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার থালায় ভাত খেতে হবে নয়ত জীবাণুর আক্রমণে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি।” অর্থাৎ স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করে যদি একটি বাক্যে আইনটি করা হতো তাহলে মানুষ অবশ্যই আইন মানতো। কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। একশ-দেড়শ বছর আগের আইন এখনো দেশে বলবৎ। ফলে মানুষের কাছে তা দুর্বোধ্য এবং এই দুর্বোধ্যতার কারণে দেখা দিচ্ছে আইনের প্রতি অনীহা এবং বাড়ছে আইনের প্রতি ভীতি। আর এমন সব আইন প্রনয়ণ হতে হতে মানুষ আজ আইন দেখে ভয় পায় কারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যে, আইন মানেই সাধারণ জনগণের জন্য কষ্টসাধ্য কিছু একটা যা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করে মানতে বাধ্য করা হবে। সমযের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা চেতনা ও রুচি বদলায় এবং একই হারে আইনকেও পরিমার্জন করতে হয়। ফলে, আইন হোক তেমন যেমনটা সর্ব সাধারণ অতি সহজেই বুঝতে পারে এবং অন্যকে সে বিষয়ে সচেতন হতে সহায়তা করতে পারে। কেননা অতি কঠিন আইন মানুষ বুঝতে না পেরে তার অপব্যাখ্যা করে এবং সমাজে ও রাষ্ট্র জীবনে তার বিরূপ প্রভার পরে। আর এসবের অন্তরালে বাসা বাঁধে নিয়ম ও আইন ভাঙ্গার নীল নকশা এবং সেই সাথে দুর্নীতি বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষকে নয় ছয় বুঝি কেউ কেউ এর ফায়দা লুটতে চায়। প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে সাধারণ জনগণের। অন্যদিকে, ফলপ্রসূ নিয়ম প্রনয়ণ করতে না পারলে তা আইন হিসেবেও গ্রহণযোগ্যতা পায় না। বাড়ে জটিলতা আর জটিলতা দূর করতে তৈরি হয় একটার পর একটা নিয়ম। হারিয়ে যায় মূল লক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও জাতি। তাই আইন হোক সেইটাই যা মানুষ স্বাভাবিক বোধ থেকে বিবেচনা করতে পারে। মানতে পারে। উৎসাহিত হয়। সংবিধান ছাড়াও তো ব্রিটেন সভ্য জাতি। আর আমরা আইনের পাহাড়ে নিচে পড়ে তলিয়ে যাচ্ছি এবং আইন নামক শব্দের প্রতি ভীতি বাড়ছে। শত শত হাজার হাজার আইন করে লাভ কি যদি সেই ফুটপাত বেদখল থাকে, রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি থাকে, অফিসে আদালতে দুর্নীতি চলে, খাদ্যে ভেজাল থাকে, টাকাতে জাল নোট থাকে, শিক্ষায় কোচিং বাণিজ্য থাকে, চিকিৎসায় ভুয়া রিপোর্ট থাকে, রাস্তায় যানজট থাকে। এসব তখন হয়েছে যখন জটিল আইন সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিষ্কার নয়। সে জানে কিন্তু বোঝে না আবার বুঝতে পারলেও পরিত্রাণের উপায় পায় না। তাই আইনকে অসুবিধা নয় বরং সুবিধা, শাস্তি নয় বরং শৃঙ্খলা এবং জটিলতা নয় বরং মানবের জীবনের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিশীলিত জীবন গড়ার উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া ও চর্চা করার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা শুরু করবার সময় এসেছে। নয়ত জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান অসভ্যতার অতল তলে তলিয়ে যাবে।
আইন হোক মানুষের উপকারের তরে, মানুষকে ফাঁদে ফেলার হাতিয়ার হিসেবে নয়। আইন হোক দৈনন্দিন জীবনকে আরো প্রাণবন্ত, গতিশীল ও ক্লাতিহীন করার জন্য। উপলব্ধি বাড়ুক এই বিষয়ে যে, দেশকে ভালোবেসে আইন ও নিয়ম মানা সর্বোচ্চ গৌরবের। সেই সাথে আবারো বলতে চাই, আইন হোক সবার জন্য, আইন হোক সহজবোধ্য।

Comments

Popular posts from this blog

SSC Board Question 2020 | ২০২০ সালের এসএসসি বোর্ড প্রশ্ন

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৯৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। গতবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ জন। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ৮৭ হাজার। চলতি বছর ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৪০ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি, ২ লাখ ৮১ হাজার ২৫৪ জন পরীক্ষার্থী দাখিল এবং ১ লাখ ৩১ হাজার ২৮৫জন শিক্ষার্থী এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি সাইটে উক্ত পরীক্ষার সকল প্রশ্ন ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে যাতে করে পরবর্তী বছরগুলোতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নগুলো অনুশীলন ও পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুতিকে আরো বেগবান করতে পারে। বাকী প্রশ্নগুলো পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই আপলোড করা হবে। বোর্ডকর্তৃক যথাযথ কর্তৃপক্ষ এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনাসমূহ নিম্নরূপ- পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদের তাদের কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনি ও পরে সৃজনশীল/ রচনামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং উভয় পরীক্ষ...

JSC Board Question | বিভিন্ন বছরের জেএসসি পরীক্ষার বোর্ড প্রশ্ন উত্তরসহ

জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষাটি ২০১০ সালে শুরু হয়। ৮ম শ্রেণিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বোর্ড পরীক্ষাটি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার মধ্য দিয়ে তাকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হয়। জেএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য না হলে কোন শিক্ষার্থী পরবর্তী শ্রেণি অর্থাৎ ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে না। ফলে শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে পড়বে। কাজেই একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক পাশের জন্য এই ধাপটিতে উত্তীর্ণ হওয়া অত্যন্ত জরুরী। পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করার জন্য নিয়মিত প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে প্রচলিত সিলেবাস অনুযায়ী বিভিন্ন বছরের বোর্ড পরীক্ষায় আসা প্রশ্নসমূহের বিশ্লেষণ দ্বারা একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করলে প্রস্তুতিটি স্বার্থক হয়। আর এই বিষয়টিকে আমলে নিয়ে edutechinfobd ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছরের পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ অনলাইনে সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করেছে। এটিকে জেএসসি পরীক্ষার বিগত বছরগুলির প্রশ্ন ব্যাংক কিংবা আর্কাইভ হিসেবে তৈরি করা হবে। অন্যদিকে, শুধুমাত্র শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষদেরও অনেক সময় বিগতবছরের প্রশ্নের তথ্য উ...

SSC Board Questions | এসএসসি সকল বোর্ড প্রশ্ন ২০১৯

বিগত ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। এ বছর ২১ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এবার মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা হলো ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ জন।  শিক্ষা ও প্রযুক্তি সাইটে উক্ত পরীক্ষার সকল প্রশ্ন ধাপে ধাপে প্রকাশ করা হবে যাতে করে আগামী বছরগুলোতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নগুলো অনুশীলন ও পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুতিকে আরো বেগবান করতে পারে। ২০২০ সালের প্রশ্নগুলো পেতে নিম্নে প্রদত্ত লিংকে ভিজিট করুন। https://edutechinfobd.blogspot.com যথারীতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সব শিক্ষার্থীর মাঝে ইংরেজি ও গণিত পরীক্ষা নিয়ে একটা আলাদা টেনশন লক্ষ করা যায়। এ বছর এসএসসি ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষায় ৪নং সেটের প্রশ্নপত্রটি নির্বাচিত হয়। তিন ঘন্টার এই পরীক্ষায় পুরোটায় লিখিত। অর্থাৎ ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে এবং অন্যান্য বিষয়ের মতো এই পরীক্ষায় কোন নৈর্ব্যক্তিক থাকে না। পরীক্ষায় যে সকল প্রশ্ন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে সেগুলো হলো- প্রথম সিন প্যাসেজটি এসেছে বোর...

© EdutechinfoBD 2017-2025